Posts

সবার আমি ছাত্র – সুনির্মল বসু

আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাই রে, কর্মী হবার মন্ত্র আমি বায়ুর কাছে পাই রে। পাহাড় শিখায় তাহার সমান- হই যেন ভাই মৌন-মহান, খোলা মাঠের উপদেশে- দিল-খোলা হই তাই রে। সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয় আপন তেজে জ্বলতে, চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে, মধুর কথা বলতে। ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর- অন্তর হোক রত্ন-আকর; নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম আপন বেগে চলতে। মাটির কাছে সহিষ্ণুতা পেলাম আমি শিক্ষা, আপন কাজে কঠোর হতে পাষান দিল দীক্ষা। ঝরনা তাহার সহজ গানে, গান জাগাল আমার প্রাণে; শ্যাম বনানী সরসতা আমায় দিল ভিক্ষা। বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র, নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র। এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়, পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায় শিখছি সে সব কৌতূহলে, নেই দ্বিধা লেশমাত্র।

জীবনের হিসাব – সুকুমার রায়

বিদ্যে বোঝাই বাবু মশাই চড়ি শখের বোটে মাঝিরে কন, “বলতে পারিস সূর্য কেন ওঠে? চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?” বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফেলফেলিয়ে হাসে, বাবু বলেন, “সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি, জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি!” খানিক বাদে কহেন বাবু, “বলত দেখি ভেবে নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় হতে নেবে? বলত কেন লবন পোরা সাগর ভরা পানি?” মাঝি সে কয়, “আরে মশাই অত কি আর জানি?” বাবু বলেন, “এই বয়সে জানিসনেও তা কি? জীবনটা তোর নেহাত খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!” আবার ভেবে কহেন বাবু, “বলত ওরে বুড়ো, কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চূড়ো? বলত দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহন লাগে কেন?” বৃদ্ধ বলেন, “আমায় কেন লজ্জা দিছেন হেন?” বাবু বলেন, “বলব কি আর বলব তোরে কি, তা,- দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।” খানিক বাদে ঝড় উঠেছে ঢেউ উঠেছে ফুলে, বাবু দেখেন নৌকাখানি ডুবল বুঝি দুলে। মাঝিরে কন, “একি আপদ ওরে ও ভাই মাঝি, ডুবল নাকি নৌকো এবার? মরব নাকি আজি?” মাঝি শুধায়, “সাতার জানো?” মাথা নারেন বাবু, মূর্খ মাঝি বল

মনে থাকবে? – আরণ্যক বসু

পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক আমরা তখন প্রেমে পড়বো মনে থাকবে? বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে শীতলপাটি বিছিয়ে দেব; সন্ধে হলে বসবো দু’জন। একটা দুটো খসবে তারা হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে, কান্ত কবির গান গাইবে তখন আমি চুপটি ক’রে দুচোখ ভ’রে থাকবো চেয়ে… মনে থাকবে? এই জন্মের দূরত্বটা পরের জন্মে চুকিয়ে দেব এই জন্মের চুলের গন্ধ পরের জন্মে থাকে যেন এই জন্মের মাতাল চাওয়া পরের জন্মে থাকে যেন মনে থাকবে? আমি হবো উড়নচন্ডি এবং খানিক উস্কোখুস্কো এই জন্মের পারিপাট্য সবার আগে ঘুচিয়ে দেব তুমি কাঁদলে গভীর সুখে এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব মনে থাকবে? পরের জন্মে কবি হবো তোমায় নিয়ে হাজারখানেক গান বাঁধবো। তোমার অমন ওষ্ঠ নিয়ে নাকছাবি আর নূপুর নিয়ে গান বানিয়ে__ মেলায় মেলায় বাউল হয়ে ঘুরে বেড়াবো… মনে থাকবে? আর যা কিছু হই বা না হই পরের জন্মে তিতাস হবো দোল মঞ্চের আবীর হবো শিউলিতলার দুর্বো হবো শরৎকালের আকাশ দেখার__ অনন্তনীল সকাল হবো; এসব কিছু হই বা

সত্য বলে কাঁদাও - রেদোয়ান মাসুদ

সত্য বলে কাঁদাও তবুও মিথ্যা বলে হাসাইও না একটা মিথ্যা বললে তবে দশটা সত্যও বিশ্বাস করবে না । সত্য বললে কাঁদে দু’দিন মিথ্যা বললে আজীবন একটা মিথ্যার প্রবঞ্চণা জীবনেও শোধরাবে না। মিথ্যা মিথ্যির এই পৃথিবীতে কতদিন করবে পদচারণা একদিন সব ফুরাইবে তবে সেদিন কিন্তু সময় পাবে না। একটা মিথ্যার কর্ম ঢাকতে দশটা মিথ্যায়ও হয় না এক জীবনে কত বলবে বলতে বলতে ফুরাবেনা। মিথ্যের শক্তি থাকে দুদিন সত্যের শক্তি শেষ হবে না মিথ্যা বলতে ভাবতে হয় সত্য বলে সময় লাগে না।

আমিই সেই মেয়ে – শুভ দাশগুপ্ত

আমিই সেই মেয়ে। বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি আপনি রোজ দেখেন। আর আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন। আমিই সেই মেয়ে। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয় আপনার রাজকীয় লাম্পট্য আমিই সেই মেয়ে। আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান যার অনাবৃত শরীর আমি সেই মেয়ে। রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে আমিই সেই মেয়ে। আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে