Posts

Showing posts from October, 2018

নীরবেই কাঁদব - রেদোয়ান মাসুদ

আমি নীরবেই কাঁদব নীরবেই হাসব, কখনও বলব না আর আমার কান্না পাচ্ছে দেখে যাও একবার । . আমি নীরবেই জ্বলব নীরবেই মরব কখন বলব না আর মরার বেলা এই তৃষ্ণার্ত ঠোটে একফোটা জল দাও একবার। . আমি নীরবেই সইব নীরবেই দেখব কখনও বলব না আর পোড়া হৃদয়খানি দেখে যাও একবার । . আমি নীরবেই ভালবাসব নীরবেই হৃদয়ে রাখব কখনও বলব না আর কত ভালভালবাসি তোমায় চেয়ে দেখ একবার । . আমি নীরবেই ভাবব নীরবেই কাছে রাখব কখনও বলব না আর একবার কাছে এসে দেখে যাও মুখটি আমার । . আমি নীরবেই অদৃশ্য হব নীরবেই চলে যাব কখনও বলব না আর চির তরে চলে যাচ্ছি বিদায় দাও এবার ।

মন ভালো নেই - মহাদেব সাহা

বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভালো নেই, মন ভালো নেই; ফাঁকা রাস্তা, শূন্য বারান্দা সারাদিন ডাকি সাড়া নেই, একবার ফিরেও চায় না কেউ পথ ভুলকরে চলে যায়, এদিকে আসে না আমি কি সহস্র সহস্র বর্ষ এভাবে তাকিয়ে থাকবো শূন্যতার দিকে? এই শূন্য ঘরে, এই নির্বসনে কতোকাল, আর কতোকাল! আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি, উদ্যানে উঠেচে ক্যাকটাস্ কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই, শুধু শূন্যতার এই দীর্ঘশ্বাস, এই দীর্ঘ পদধ্বনি। টেলিফোন ঘোরাতে ঘোরাতে আমি ক্লান্ত ডাকতে ডাকতে একশেষ; কেউ ডাক শোনে না, কেউ ফিরে তাকায় না এই হিমঘরে ভাঙা চেয়ারে একা বসে আছি। এ কী শান্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো ঈশ্বর, এভাবে দগ্ধ হওয়ার নাম কি বেঁচে থাকা! তবু মানুষ বেঁচে থাকতে চায়, আমি বেঁচে থাকতে চাই আমি ভালোবাসতে চাই, পাগলের মতো ভালোবাসতে চাই- এই কি আমার অপরাধ! আজ বিষাদ ছুঁয়েছে বুক, বিষাদ ছুঁয়েছে বুক মন ভালো নেই, মন ভালো নেই; তোমার আসার কথা ছিলো, তোমার যাওয়ার কথা ছিল- আসা-যাওয়ার পথের ধারে ফুল ফোটানো কথা ছিলো সেসব কিছুই হলো না, কিছুই হলো না; আমার ভেতরে শুধু এক কোটি বছর ধরে অশ্রুপাত শুধু হাহাকার শুধু শূন্যতা, শূন্যতা। ত

কেউ কথা রাখেনি - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

Image
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি। মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে! নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে? একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভিতরে রাস-উৎসব অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা কত রকম আমোদে হেসেছে আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি! বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও… বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা! বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল, যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসব

বনলতা সেন - জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে , ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’ পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন। সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল; পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল; সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী- ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন; থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।